যে খাবার খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে
আমাদের কমবেশি সবারই বিকেল বেলা হালকা খিদে লাগে। এটা কোন ভাতের খিদা নয় বা ভারী কোনো খাবারের খিদে নয় এটি হালকা কিছু খাবার যেমন মুড়ি বাদাম চিড়া।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে বিকেল বেলা এসব খাবার খেয়ে থাকে। অনেক মানুষ আছে মুড়ি পছন্দ করেন না আবার অনেক মানুষ আছেন চিনেবাদাম তাদের খুব প্রিয়।
অনেকেই তো কোথাও দূরে ঘুরতে গেলে বা বেড়াতে গেলে চিনেবাদাম কিনে ব্যাগে করে নিয়ে যায়। পরে তারা নীরব নির্জন এলাকায় বসে এই বাদামের স্বাদ উপভোগ করে।
এই বাদাম খেলে আমাদের পেট না ভরলেও কিন্তু মন অনেকাংশে ভরে যায়। কিন্তু আপনি কি জানেন? এই চিনা বাদাম খেলে আপনার হৃদযন্ত্র ভালো থাকে!
কাঠবাদাম জলে ভিজিয়ে খাবেন
যারা স্বাস্থ্যসচেতন তারা দৈনিক বাদাম খেয়ে থাকেন। কোন কাজের ফাঁকে বা অবসর সময়ে গরম গরম বাদাম ভাজা কেনা খেতে পছন্দ করে?
ওজন কমানোর জন্য বাদাম যেমন উপকারী ডায়াবেটিসের জন্য বাদাম তেমন উপকারী আবার হৃদরোগ প্রতিরোধে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আর সব থেকে বড় কথা হল বাদাম আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তাই বলা যায় বড় খিদের ছোট্ট সমাধান একমুঠো বাদাম।
বাদাম আপনি চাইলে সব সময় আপনার সঙ্গে রাখতে পারেন, বাদাম একটি সহজলভ্যপ বটে। আর এই চিনাবাদাম আপনি যেকোনো জায়গায় পাবেন, আবার দামের দিক দিয়ে চিন্তা করলে এটি দামেও অনেক সস্তা কিন্তু এর উপকারিতা অনেক বেশি।
জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে চার থেকে পাঁচটি চিনে বাদাম খেলে ইস্কেমিক স্ট্রোক এবং হৃদরোগের মতো বড় ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
চিনেবাদামের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
১। চিনেবাদাম এর মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে তবে এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক কম।
২। চিনেবাদাম এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক সহায়তা করে।
৩। চিনা বাদামের মধ্যে থাকা যে জিনিসটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে তা হল স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আরজিনিন নামে একটি ফাইবার। মূলত স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও আরজিনিন নামে এই একটি ফাইবার হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অনেক ভুমিকা পালন করে।
৪। এই চিনেবাদাম যেমন হৃদ রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে ঠিক তেমনি ক্যান্সারের মতো বড় রোগের ঝুঁকিও কমায় এই চিনেবাদাম। কারণ এতে আছে ভিটামিন ই এর মত গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যা ক্যান্সারের মতো ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫। স্বাভাবিক ওজনের তুলনায় আপনার শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে আপনার শরীরে নানা রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের আশঙ্কাও থেকে থাকে। তাই আপনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনে বাদাম খাবেন, এতে বিপাক হার বাড়ে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যারা চিনেবাদাম পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস যা আপনাকে চিনে বাদাম খাওয়ার জন্য আরো আগ্রহ বাড়াবে।
১। চিনেবাদাম এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, কার্বো-হাইড্রেট, ও প্রোটিন। প্রতিদিন এক মুঠো চিনা বাদাম খেলে, আপনি অনেক বড় বড় অসুখ থেকে বাঁচতে পারেন।
২। আপনার শরীরের মধ্যে থাকা মাত্রাধিক কোলেস্টেরল হূদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি ও ডায়াবেটিস এর মতো কঠিন রোগ সৃষ্টি করে থাকে। এই চিনাবাদাম আপনার শরীরে থাকা কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই আপনি নিয়মিত চিনা বাদাম খেতে পারেন।
৩। এই চিনাবাদাম আপনার শরীরের ফ্যাট বা চর্বি কমাতে অনেক সাহায্য করে। প্রতিদিন এক মুঠো করে চিনা বাদাম খেলে আপনার পেট ও কিছুটা ভরবে আবার আপনার ওজন কমাতেও সাহায্য করবে।
৪। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই বাদাম রাতে আপনি আধা কাপ জলে ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে উঠে দেখবেন এটি ফুলে উঠেছে তারপরে আপনি সবগুলো খেয়ে নিবেন এতে দেখবেন আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চিনা বাদামের মধ্যে থাকায অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূল বিশেষভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
৫। আপনার মস্তিষ্ক ভালো রাখার জন্য এই চিনাবাদাম বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করে। চিনা বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে বি ৩ আছে যা মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে থাকে। তাই প্রতিদিন চিনাবাদাম বা চিনা বাদামের মাখন খান তাহলে আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য আগের থেকে অনেক ভালো থাকবে।
৬। একজন মানুষের শরীরের সঠিক পরিমাণ পুষ্টি না থাকলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আস্তে আস্তে কমে যায়। চিনা বাদামের মধ্যে যে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে তা আমাদের শরীরে কঠিন রোগকে বাসা বাঁধতে বাধা দেয়। তাই বলা যায় এই চিনাবাদাম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৭। এছাড়াও ক্যান্সারের মতো এত বড় রোগ কে ধ্বংস করে ফেলে চিনা বাদামের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এই এন্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিভিন্ন কোষকে বেড়ে উঠতে দেয় না। চিনাবাদাম আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৮। চিনা বাদামের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আপনার শরীরের অ্যাক্সিডেটিভ স্টেজ কমিয়ে কোষদের ক্ষত রোধ করে দেয়। আবার এই চিনাবাদাম আপনার ত্বকের বয়স কমাতে অনেক ভূমিকা পালন করে, আপনার ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ায় চিনাবাদাম।
৯। আপনার শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় এই চিনাবাদাম। অনেক গবেষণা চলাকালীন দেখা গেছে, বাদামের ভিতরে থাকা ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর, কিছুক্ষণের মধ্যে কাজ করে যায় প্রভাবে হাড়ের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
চিনেবাদাম খাওয়ার নিয়ম
আপনার হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে বিশেষজ্ঞদের মতে সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন চিনে বাদাম খাওয়া অতীব জরুরী। তবে খেয়াল রাখবেন প্রতিদিন 6 থেকে 7 গ্রামের বেশি খাবেন না।
আর কারো যদি এলার্জির মত বড় কোন সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে আপনি সেক্ষেত্রে বাদাম খাওয়ার আগে আপনি ভাল একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
আমাদের কথা
আমাদের এই পোষ্ট টি আপনার কাছে কেমন লেগেছে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন। আমরা সর্বদা আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনা করছি, সবাই ভাল এবং সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ!




